17. চিঠিপত্রের আদান-প্রদান

【1】

অনুচ্ছেদঃ চিঠিপত্রের উত্তর দেয়া।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) আমার মতে চিঠিপত্রের উত্তর দেয়া সালামের উত্তর দেয়ার মতই বাধ্যকর। -(ইবনে আবু শায়বাহ, বাযযার, তাবাকাত ইবনে সাদ)

【2】

অনুচ্ছেদঃ মহিলাদের নিকট চিঠিপত্র লেখা এবং তাদের জবাবী পত্র।

আয়েশা বিনতে তালহা (র) আমি আয়েশা (রাঃ)-র তত্ত্বাবধানাধীন থাকাকালে বিভিন্ন শহর থেকে লোকজন তার কাছে আসতো। তার সঙ্গে আমার সম্পর্কের কারণে প্রবীণগণ আমাকে কন্যা বলে সম্বোধন করতো এবং যুবকরা আমাকে বোন বলতো। তারা আমাকে উপহারাদিও দিতো এবং বিভিন্ন শহর থেকে আমাকে চিঠিপত্রও লিখতো। আমি আয়েশা (রাঃ)-কে বলতাম, হে খালা! এটা অমুকের চিঠি এবং তার উপহার। আয়েশা (রাঃ) আমাকে বলতেন, হে বেটি! তার চিঠির উত্তর দাও এবং তাকেও উপহারাদি পাঠাও। তোমার কাছে দেয়ার মত কিছু না থাকলে আমি তোমাকে দিবো। আয়েশা (র) বলেন, অতএব আয়েশা (রাঃ) আমাকে সেই ব্যবস্থা করে দিতেন।

【3】

অনুচ্ছেদঃ চিঠিপত্রের শিরোনাম কিভাবে লিখতে হবে।

আবদুল্লাহ ইবনে দীনার (র) আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) আবদুল মালেক ইবনে মারওয়ানের নিকট বায়আত হওয়ার জন্য তাকে পত্র লিখেন। তিনি তাকে লিখেন, “বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম। আবদুল্লাহ ইবনে উমারের পক্ষ থেকে আমীরুল মুমিনীন আবদুল মালেককে। আপনাকে সালাম। আমি আপনার নিকট আল্লাহর প্রশংসা করি, যিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নাই এবং আমি যথাসাধ্য আপনার (নির্দেশ) শোনা ও মানার স্বীকারোক্তি করছি—আল্লাহর বিধান ও তাঁর রাসূলের সুন্নাত মোতাবেক। -(বুখারী, মুয়াত্তা মালিক)

【4】

অনুচ্ছেদঃ অতঃপর।

যায়েদ ইবনে আসলাম (র) “আমার পিতা আমাকে (আমার দাদা) ইবনে উমার (রাঃ)-র নিকট পাঠান। আমি তাকে লিখতে দেখলাম, বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম। অতঃপর....। -(বুখারী, মুয়াত্তা মালিক) হিশাম ইবনে উরওয়া (র) আমি নবী (সাঃ)-এর কতগুলো চিঠি দেখলাম। যেখানেই কোন বক্তব্য শেষ হয়েছে সেখানে তিনি বলেছেনঃ অতঃপর।

【5】

অনুচ্ছেদঃ চিঠিপত্রের শিরোনামে বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম।

যায়েদ (রাঃ)-র পরিবারের প্রবীণদের যায়েদ ইবনে সাবিত (র) নিম্নোক্ত চিঠি লিখেনঃ বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম। যায়েদ ইবনে সাবিতের পক্ষ থেকে আমীরুল মুমিনীন আল্লাহর বান্দা মুআবিয়াকে। আমীরুল মুমিনীন! আপনাকে সালাম এবং আল্লাহর রহমাত। আমি আপনার সমীপে আল্লাহর প্রশংসা করি, যিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নাই। অতঃপর..... ।(বাযযার) আবু মাসউদ আল-জুরায়রী (র) এক ব্যক্তি হাসান বসরী (র)-এর নিকট বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম পাঠ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তিনি বলেন, তা চিঠিপত্রের শিরোনাম।

【6】

অনুচ্ছেদঃ চিঠির সূচনায় যা লিখবে।

নাফে (র) মুআবিয়া (রাঃ)-র নিকট ইবনে উমার (রাঃ)-র একটি প্রয়োজন ছিল। তাই তিনি তাকে চিঠি লিখতে মনস্থ করলেন। লোকজন বললো, শুরুতে তার নাম লিখুন এবং তারা একথাই বলতে থাকলো। তিনি লিখেন, বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম, মুআবিয়াকে। আনাস ইবনে সীরীন (র) আমি ইবনে উমার (রাঃ)-র চিঠি লিখে দিতাম। তিনি বলেন, তুমি লিখোঃ বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম, অতঃপর অমুককে। আনাস ইবনে সীরীন (র) এক ব্যক্তি ইবনে উমার (রাঃ)-র সামনে চিঠি লিখলো, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম, অমুককে। ইবনে উমার (রাঃ) তাকে এভাবে লিখতে নিষেধ করেন এবং বলেন, বলো, বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম, এটি তাকে লিখিত। যায়েদ (রাঃ)-র পরিবারের প্রবীণদের যায়েদ ইবনে সাবিত (রাঃ) এই চিঠি লিখেনঃ যায়েদ ইবনে সাবিতের তরফ থেকে আল্লাহর বান্দা আমীরুল মুমিনীন মুআবিয়াকে। আমীরুল মুমিনীন! আপনাকে সালাম ও আল্লাহর রহমাত কামনা করি। আমি আপনার সমীপে আল্লাহর প্রশংসা করি, যিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাইবনে মাজাহ, অতঃপর। (বাযযার) আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেছেনঃ নবী ইসরাঈলের এক ব্যক্তি..... অতঃপর রাবী পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেন এবং তার প্রতিপক্ষ তাকে লিখলো, অমুকের তরফ থেকে অমুককে (বুখারীতে কিতাবুল কাফালার প্রথম অনুচ্ছেদ শিরোনামের অধীন হাদীসটি সবিস্তারে উক্ত হয়েছে)।

【7】

অনুচ্ছেদঃ আপনার রাত কেমন কাটলো?

মাহমূদ ইবনে লাবীদ (র) খন্দকের যুদ্ধের দিন সাদ (রাঃ)-র চোখ আঘাতপ্রাপ্ত হলে এবং তার অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে রাফীদা নাম্নী এক মহিলার নিকট পৌছে দেয়া হলো। তিনি আহতের চিকিৎসা করতেন। নবী (সাঃ) সকাল-সন্ধ্যায় সাদ (রাঃ)-র নিকট দিয়ে যেতে জিজ্ঞেস করতেনঃ তোমার দিন কেমন কাটলো, তোমার রাত কেমন কাটলো? তিনি তাকে (নিজ অবস্থা) অবহিত করতেন। (বুখারীর তারীখ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মৃত্যুব্যাধিগ্রস্ত অবস্থায় আলী (রাঃ) তার নিকট থেকে বের হয়ে আসলে লোকজন জিজ্ঞেস করে, হে আবুল হাসান! রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর রাত কেমন কাটলো? তিনি বলেন, আলহামদু লিল্লাহ! তিনি সুস্থ অবস্থায় রাত কাটিয়েছেন। রাবী বলেন, আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) তার হাত ধরে জিজ্ঞেস করেন, আমি তো দেখছি তুমি তিন দিন পর লাঠির দাস হবে। আল্লাহর শপথ আমি তো দেখছি তিনি তাঁর এই রোগেই মৃত্যুবরণ করবেন। মৃত্যুর পূর্বে আবদুল মুত্তালিব বংশের লোকের চেহারা কেমন হয়ে যায় তা আমি জানি। অতএব চলো, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট যাই এবং তাকে জিজ্ঞেস করি তাঁর পরে কে তার স্থলাভিষিক্ত হবে? যদি তা আমাদের মধ্যে থাকে তবে তো আমরা তা জেনে গেলাম। আর যদি তা আমাদের বহির্ভূত লোকদের মধ্যে চলে যায় তবে আমরা তাঁর সাথে কথা বলবো, (যাতে) তিনি আমাদের সম্পর্কে ওসিয়াত করে যান। আলী (রাঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! যদি আমরা তাকে জিজ্ঞেস করি এবং তিনি আমাদেরকে (ঐ পদে সমাসীন হতে) নিষেধ করেন, তবে তার পরে লোকেরা আর কখনো আমাদেরকে ঐ পদ দিবে না। অতএব আল্লাহর শপথ! আমি এই বিষয়ে কখনো রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করবো না। (বুখারী হা/৪০৯৪, আহমাদ)

【8】

অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি পত্রের সমাপ্তিতে আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ লিখে এবং তার সাথে প্রেরকের নাম-ঠিকানা ও পত্র প্রেরণের তারিখও লিখে।

ইবনে আবুয যিনাদ (র) আমার পিতা আমার নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, তিনি নিম্নোক্ত পত্রটি খারিজা ইবনে যায়েদ (র) ও যায়েদ পরিবারের প্রবীণদের নিকট থেকে পেয়েছেনঃ বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম। যায়েদ ইবনে সাবিতের পক্ষ থেকে আল্লাহর বান্দা ও মুমিনদের নেতা মুআবিয়াকে। আমীরুল মুমিনীন! আপনাকে সালাম ও আল্লাহর রহমাত। আমি আপনার সমীপে আল্লাহর প্রশংসা করছি, যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নাই। অতঃপর আপনি আমাকে দাদা বা নানা ও বোনদের ওয়ারিসী স্বত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছেন (অতঃপর চিঠির বিষয়বস্তু উক্ত হয়েছে)। আমরা আল্লাহর নিকট সৎপথ প্রাপ্তি, সুস্থ স্মরণশক্তি ও আমাদের সকল কাজ সুষ্ঠভাবে বুঝবার তৌকীক কামনা করি। অপরদিকে আমরা আল্লাহর কাছে পথভ্রষ্ট হওয়া থেকে, মূর্খতা প্রসূত আচরণ করা থেকে এবং আমাদের জ্ঞান বহির্ভূত দায়িত্ব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি। হে আমীরুল মুমিনীন! আপনার উপর শান্তি ও আল্লাহর রহমাত বর্ষিত হোক এবং তিনি আপনাকে ক্ষমা করুন। উহাইব (র) এই পত্ৰখানা বিয়াল্লিশ হিজরীর রমযান মাসের বারো দিন অবশিষ্ট থাকতে বৃহস্পতিবার লিপিবদ্ধ করেন। (বাযযার)

【9】

অনুচ্ছেদঃ আপনি কেমন আছেন?

আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-কে এক ব্যক্তি সালাম দিলো। তিনি সালামের উত্তর দিয়ে লোকটিকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কেমন আছো? সে বললো, আমি আপনার সমীপে আল্লাহর প্রশংসা করছি। উমার (রাঃ) বলেন, আমি তোমার নিকট এটাই আশা করছিলাম। -(মুয়াত্তা মালিক)

【10】

অনুচ্ছেদঃ কোন ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার রাত কেমন গেলো? সে কিভাবে এর জবাব দিবে?

জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার রাত কেমন কাটলো? তিনি বলেনঃ ভালোভাবেই কেটেছে, এমন জনগোষ্ঠীর তুলনায় যারা কোন জানাযায় উপস্থিত হয়নি এবং রুগ্ন ব্যক্তিকেও দেখতে যায়নি। (ইবনে মাজাহ হা/৩৭১০) মুহাজির (র) আমি নবী (সাঃ)-এর হাদারামাওতবাসী এক স্থূলকায় সাহাবীর মজলিসে বসতাম। তাকে যখন বলা হতো, আপনার রাত কেমন কেটেছে, তখন তিনি বলতেন, আমরা আল্লাহর সাথে শরীক করি না। সাইফ ইবনে ওয়াহব (র) আবু তুফাইল (রাঃ) আমাকে জিজ্ঞেস করেন, তোমার বয়স কতো ? আমি বললাম, তেত্রিশ বছর। তিনি বলেন, আমি কি তোমার নিকট একটি হাদীস বর্ণনা করবো নাসাঈ, যা আমি হুযায়ফা (রাঃ)-এর নিকট শুনেছি? আমর ইবনে সুলাই (রাঃ) নামক মুহারিব খাসফার এক ব্যক্তি, যিনি সাহাবী ছিলেন এবং যিনি ছিলেন তখন আমার বয়সী এবং আমি ছিলাম তোমার বয়সী। আমরা এক মসজিদে হুযায়ফা (রাঃ)-র নিকট আসলাম। আমি সমাবেশের একেবারে শেষ প্রান্তে বসলাম। আমর (রাঃ) উঠে গিয়ে হুযায়ফা (রাঃ)-র সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর বান্দা! আপনার রাত কেমন কেটেছে বা আপনার দিন কেমন কেটেছে? তিনি বলেন, আমি আল্লাহর প্রশংসা করি। তিনি জিজ্ঞেস করেন, এসব কি কথা যা আপনার বরাতে আমাদের নিকট পৌঁছে? হ্যায়ফা (রাঃ) বলেন, হে আমরা আমার বরাতে তোমার নিকট কি পৌঁছেছে? তিনি বলেন, এমন কতক হাদীস যা আমি কখনো শুনিনি। তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ আমি যদি তোমার নিকট সেইসব হাদীস বর্ণনা করি যা আমি শুনি, তাহলে তোমরা এই রাতের কিয়দংশ-ও তুমি আমার সাথে অপেক্ষা করবে না। কিন্তু হে আমর ইবনে সুলাই! যখন তুমি দেখবে যে, কায়েস গোত্র সিরিয়ার কর্তৃত্ব লাভ করেছে তখন সাবধান, আত্মরক্ষা করো। আল্লাহর শপথ! কায়েস গোত্র আল্লাহর কোনও মুমিন বান্দাকে ভীত-সন্ত্রস্ত অথবা হত্যা না করে ক্ষান্ত হবে না। আল্লাহর শপথ! তাদের সামনে এমন এক যুগ আসবে যখন তারা যে কোন গুনাহের কাজ না করে ছাড়বে না। আমর (রাঃ) বলেন, আল্লাহ আপনাকে দয়া করুন, আপনি আপনার জনগোষ্ঠীকে কিভাবে বশীভূত করবেন ? তিনি বলেন, এটা তো আমারও দুশ্চিন্তার বিষয়। আতঃপর তিনি বসে পড়লেন। (হাকিম)